শীতে বাড়ছে হাঁসের চাহিদা

বাঙালী মানে খাদ্য রসিক। ভোজন রসিক বাঙালির সুনাম পুরো পৃথিবী জুড়ে রয়েছে। ঋতুভেদে ভিন্ন ভিন্ন খাবারের প্রচলন বাঙালির ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে। অঞ্চলভেদে সুস্বাদু খাবারের প্রচলন তো সেই আদি আমল থেকে। শুধুমাত্র খাবারের ভিন্নতা ও স্বাদের দিক বিবেচনায়ও পরিচিতি পায় বিভিন্ন এলাাকা। কুয়াশার চাদরে মোড়ানো শীতে বাঙালির জনপ্রিয় খাবারের অন্যতম—হাঁস।

শীতে যতই উৎসব আর পিঠাপুলির আয়োজন হোক; হাঁস খেতে না পারলে যেন সব আয়োজন অপূর্ণ থেকে যায়। শীতকালে হাঁসের স্বাদও দ্বিগুণ হয়ে যায়। হাঁসের গায়ে অতিরিক্ত চর্বি জমে ফলে স্বাদ ও পুষ্টিমান বহুগুণ বেড়ে যায়। শীতের রাতে হাঁসের সাথে গরম চিতই পিঠা, চালের আটার রুটি কিংবা ছিটা রুটি; জমে ক্ষীর। শীতকাল হাঁসের মাংস খাওয়ার উপযুক্ত সময়।

শহরে-গ্রামে হাঁস পার্টির আয়োজন চলে সারা শীতকাল জুড়ে। শহরে বাসাবাড়ির ছাদে চলে হাঁসপার্টি। ডিজের তালে তালে নেচেগেয়ে মাতে তরুণ-তরুনীরা। পারিবারিক আড্ডায় মিলিত হয় আত্মীয়স্বজন। তবে হাঁস খাওয়ার আসর ভালো জমে গ্রামে। দিনের বেলা গ্রামের বন্ধুদের সাথে ‘জোলাভাতি’ কিংবা রাতে ব্যাডমিন্টন খেলা শেষে বন্ধুদের আড্ডায়; শীতকালে একবার হাঁস না খেলে যেন মজাটাই মিস হয়ে যায়! রাজনৈতিক নেতারাও শীতকালে হাঁসপার্টি করে থাকেন।

ঢাকায় মানুষের হাঁসের গোশত খাওয়ার জন্য বিখ্যাত—তিনশো ফিট নীলা বাজার, পুরান ঢাকার লালবাগ, পরিবাগ, মোহাম্মদপুর সাত মসজিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা। এছাড়াও শহরের ছোট-বড় হোটেল-রেঁস্তোরাতেও হাঁসের বিশেষ আইটেম পাওয়া যায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় হাসেঁর গোশত খেতে উত্তরা থেকে এসেছেন জারিন তাসনিম। তিনি বলেন, বন্ধের দিনে ঘুরাঘুরির পর ভালো-মন্দ কিছু খেতে ইচ্ছে করে। এখানে আসলে সব একসাথেই পাওয়া যায়। তবে বটতলার হাঁসের গোশতের মজা অন্য সব জায়গার চেয়ে আলাদা। আমি এর আগেও এখানে খেয়েছি। এবার বন্ধুদের নিয়ে এসেছি। আর শীতকালে সারাদিন ঘুরাঘুরির পর হাঁসের গোশতের সাথে চালের রুটি অমৃত।

শীতকালে জমে উঠে ঢাকার হাঁসর বাজারও। রাজধানীর নবাবপুর, ধুপখোলা, নারিন্দা, লালবাগ, কাওরানবাজারে পাইকারি দামে হাঁস বিক্রি হয়। এছাড়াও শীতকে কেন্দ্র করে রাজধানীর আনাচেকানাচে ছোটখাটো বাজারগুলোতেও হাঁস বিক্রি করা হয়। অন্য সময়ের চেয়ে বেশি বিক্রি হয় বলে হাঁসের দামও কিছুটা বাড়তি থাকে এই মৌসুমে।

নবাবপুরের পাইকারি হাঁস বিক্রেতা নুরুল ইসলাম বলেন, শীতের সিজনে হাঁস বেশি বিক্রি হয়। তাই অন্য সিজনের চেয়ে শীতে আমরা হাঁস বেশি নিয়ে আসি। ঢাকায় আনা বেশিরভাগ হাঁস কিশোরগঞ্জ হাওর ও টাঙ্গাইল থেকে আসে। প্রতিটি হাঁস ৫শ টাকা থেকে ৮শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় বলে জানান তিনি