ভরা মৌসুমেও পর্যটকের খরা

নভেম্বর থেকে শীতের মাসগুলো পর্যটনের ভরা মৌসুম। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এই মৌসুমের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু এই ভরা মৌসুমেও প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক না থাকায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই খাত।

বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা টানা হরতাল-অবরোধের প্রভাব পড়েছে দেশের পর্যটন শিল্পে। এই মৌসুমে পর্যটন খাতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি পর্যটন ব্যবসায়ীদের। লাগাতার রাজনৈতিক কর্মসূচির ফলে পর্যটক কমেছে, তাই ব্যবসাও টান পড়েছে।

দেশব্যাপী লাগাতার হরতাল-অবরোধ দেওয়ায় সহিংসতার ভয়ে মানুষ ভ্রমণ করতে অনিচ্ছুক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলমান অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে তাদের লোকসান আগামীতে আরও বাড়বে বলে মনে করেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটন খাতে ভাটা পড়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এতে আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চলমান অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে তাদের লোকসান আগামীতে আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১৪শ পর্যটন স্থান রয়েছে। এর মধ্যে ২৮১টি স্থানে পর্যটকরা নিয়মিত যান। প্রতিবছর এসব পর্যটন কেন্দ্রে দেড় কোটি দেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন। দেশের শীর্ষ পর্যটনগুলোর মধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-বান্দরবান, সাজেক ভ্যালি, সুন্দরবন, সিলেট, কিশোরগঞ্জ হাওড় অঞ্চল অন্যতম।

প্রায় ৫শ হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট ছাড়াও দুই হাজারেরও বেশি খাবারের দোকান নিয়ে কক্সবাজার দেশের শীর্ষ পর্যটন স্থান। অথচ, লাগাতার হরতাল-অবরোধের কারণে ভরা মৌসুমে পর্যটনশূন্য কক্সবাজার। পূর্বে হোটেল বুকিং দেয়া থাকলেও অনেকেই সেটি বাতিল করছেন। পর্যটন পয়েন্টগুলোতে নেই পর্যটক।

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বলেন, এখানকার প্রায় রেস্তোরাঁ পর্যটক ঘিরে জমজমাট থাকে। কিন্তু অবরোধে পর্যটক-খরায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। আমরা চাই কক্সবাজার হরতাল-অবরোধমুক্ত থাক। না হয় ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নিয়ে বিকল্প পথ বেছে নিতে হবে।

লাগাতার হরতাল-অবরোধে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে হাওড়ের পর্যটন এলাকা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও এখন সুনসান নীরবতা। হাওড়কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় সময় পার করছে।

কিশোরগঞ্জ শহরের গাঙচিল রেস্তোরাঁ ও আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার সুমন রহমান বলেন, হরতাল-অবরোধের আগে এমন ছুটির দিনে এই রেস্তোরাঁ ও আবাসিক হোটেল পর্যটককে ঠাসা থাকত। আর এখন তো ডেকে ডেকে কাস্টমার ও বোর্ডার আনার দশা। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে এ ব্যবসা লাটে উঠবে।

প্রতিবছর এ সময় পর্যটননগরী সিলেট এবং মৌলভীবাজার জেলায় ভিড় করতেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। কিন্তু হরতাল ও অবরোধের কারণে বেশিরভাগই হোটেলের বুকিং বাতিল করেছেন তারা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসার গণপরিবহন না পাওয়া ও রাস্তাঘাটে সংঘাত-সংঘর্ষের ভয়ের কথা চিন্তা করে এত দূরের পথে কেউ বেড়াতে বের হচ্ছেন না। হরতাল-অবরোধের প্রভাব পড়েছে সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোতে। অবরোধে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সিলেটে পর্যটক আসা কমে গেছে।

এতে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র জাফলং, সারিনদী, লালাখাল, তামাবিল, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, বিছনাকন্দি, পান্থুমাই জলপ্রপাত, মিঠাপানির জলাবন রাতারগুল, ওসমানী শিশু পার্ক, ড্রিমল্যান্ড, টিলাগড় ইকোপার্ক প্রায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। পর্যটক কম থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটনকেন্দ্রিক এখানকার দোকানপাটের ব্যবসায়ীরা। ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসতেন পর্যটকরা। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এখানেও দেখা মিলছে না ভ্রমণপিপাসুদের।

পর্যটনখাতের বেসরকারি ট্যুরিস্ট প্রতিষ্ঠান ওয়াইল্ড ট্যুরিজম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কেফায়েত উল্যাহ বলেন, আমাদের ব্যবসা হুমকির মুখে। ভরা মৌসুমে যেখানে আমাদের প্রতিমাসে ১৫-২০টা ট্যুর থাকতো, সেখানে এখন পুরো মাস দেশে কোনো ব্যবসা নেই। বিদেশের ট্যুরগুলোও অনেক কমে গেছে।