ফের দীর্ঘসূত্রিতায় গুচ্ছ ভর্তি

নানান অব্যবস্থাপনা, সমালোচনার মধ্য দিয়ে দেশের ২৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে ক্লাস শুরু হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে সমালোচনার মুখেও একই পথেই হাঁটছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের সময়ক্ষেপণ রোধে দ্রুত সময়ে ভর্তি পরীক্ষার বিপরিতে স্বল্প প্রস্তুতির দীর্ঘ পথেই এগুচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, আবেদন ও যাচাই-বাছাই একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এপ্রিলের শেষ দিকে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কথা ভাবা হচ্ছে। আগামী রোববার (২১ জানুয়ারি) গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার একটি সভা হতে পারে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

জানা যায়, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাগবে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে চালু হয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ২২টি ও সর্বশেষ এ বছর আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হয়ে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিতে সিদ্ধান্ত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা শেষের ৪ মাস ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৫ মাস পর ক্লাস শুরু হয়। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ক্লাস শুরু হওয়ার ৫ মাস পরও চালু থাকে ভর্তি কার্যক্রম।

শুরু থেকে গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষায় ফেরার ইঙ্গিত দেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির ‘কড়া বার্তা’য় সে উদ্যোগ কখনো আলোর মুখ দেখেনি।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের একদিকে ভোগান্তি কমানোর কথা বললেও অন্যদিকে ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভর্তির আবেদন থেকে শুরু করে পরীক্ষা, শিক্ষার্থী ভর্তি, মাইগ্রেশন ও ক্লাস শুরু করতে এক বছরেরও বেশি সময় নষ্ট হচ্ছে। এতে করে মানসিকভাবে হতাশায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ অবসাদে শিক্ষা জীবনেরও ইতি টানছেন অনেক শিক্ষার্থী। অভিযোগ আছে, বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী পায় না। বিগত বছরগুলোতে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ১০-১৫ বার পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিক্ষার্থী পায়নি। আসন খালি রেখেই শুরু করে শিক্ষা কার্যক্রম।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, একটি নতুন প্রক্রিয়া শুরু হলে সেখানে কিছু সমস্যা থাকে। কিন্তু গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির শুরু থেকে যেসব সমস্যা ছিলো, সেসব সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি শেষ হয়, গুচ্ছে তখন ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ততদিনে কয়েক সেমিস্টার শেষ করে ফেলে। এতে করে গুচ্ছভূক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় এক বছর পিছিয়ে থাকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে।

পিরোজপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে ইউজিসির সাথে উপাচার্যদের একটি সভা হয়েছে। সেখানে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এবারের পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে পরবর্তী সভা কবে হবে সেটা এখনো জানা নেই।

তিনি আরও বলেন, গুচ্ছ ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের লাভের কথা বলে অন্যদিকে ক্ষতি করা হচ্ছে। এটা অনুচিত। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের ভর্তি এ বছরের জানুয়ারিতে এসে শেষ হয়েছে। গুচ্ছ নিয়ে ইউজিসির সভা হওয়া উচিত এইচএসসির রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ার আগে। আগে থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে রেজাল্ট প্রকাশের দুই সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা নেয়া যেতো। তাহলে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় বেঁচে যেতো। বর্তমানে যে সিস্টেমে চলে আসছে সেটা শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন ক্ষতি; বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যও ক্ষতি। এনটিএ গঠনের প্রক্রিয়াও ধীরগতিতে।

গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, সামনের সভায় আমরা ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নিয়ে আলোচনা করবো। তবে আমাদের টার্গেট ৩০ জুনের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ১ জুলাই থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক যোগে ক্লাস শুরু হবে।

তিনি বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একক ভর্তি পরীক্ষার আওতায় না নিয়ে আসলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পুরোপুরিভাবে যাবে না। গত বছর আমরা ইউজিসিকে শর্ত দিয়েছিলাম, এ বছর থেকে একক ভর্তি পরীক্ষা না হলে আমরা গুচ্ছে থাকবো না। কিন্তু ইউজিসি সে শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা এবারও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করছি।